বাংলাদেশে এমবিবিএস শিক্ষার মান, চিকিৎসকের অদক্ষতা, অপচিকিৎসার কারণ বিশ্লেষণ ও সমাধানের উপায়

    নিম্নগামী এমবিবিএস শিক্ষার মান

    বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতে এমবিবিএস চিকিৎসকদের অদক্ষতা, অপচিকিৎসা এবং ভুল চিকিৎসার ঘটনা ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সমস্যাগুলো শুধুমাত্র চিকিৎসা সেবার মানকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে না, বরং জনগণের স্বাস্থ্যসেবার প্রতি আস্থাকেও নষ্ট করছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভুল চিকিৎসা বা অবহেলার কারণে রোগী মৃত্যুর ঘটনা বেড়ে যাওয়া, চিকিৎসার জন্য বিদেশে ভ্রমণের রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় এমবিবিএস শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন জাতীয় আলোচনায় উঠে এসেছে। এই প্রবন্ধে আমরা এমবিবিএস শিক্ষার মানের অবনতি, স্বাস্থ্যসেবার বর্তমান অবস্থা এবং এর সমাধানের উপায় নিয়ে আলোচনা করব।

    বাংলাদেশ এমবিবিএস শিক্ষার মান এখনো অর্জন করতে পারেনি WFME স্বীকৃতি। 

    ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেডিকেল এডুকেশন (WFME) মেডিকেল শিক্ষার মান উন্নয়নে কাজ করে এবং বিভিন্ন দেশের স্বীকৃতি সংস্থাগুলোকে মূল্যায়ন করে। WFME-এর স্বীকৃতি পেতে হলে একটি দেশকে নির্দিষ্ট মানদণ্ড পূরণ করতে হয়, যা মেডিকেল শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করে। এটি স্বীকৃত দেশগুলোর মেডিকেল গ্র্যাজুয়েটদের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি ও কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করে।


    পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর মধ্যে WFME স্বীকৃতি:

    • ভারত ইতোমধ্যে WFME-এর স্বীকৃতি পেয়েছে। 

    • এছাড়া, কাজাখস্তানের 'ইন্ডিপেন্ডেন্ট এজেন্সি ফর অ্যাক্রেডিটেশন অ্যান্ড রেটিং' (IAAR) WFME-এর স্বীকৃতি পেয়েছে। 

    বিশেষ করে, ২০২৪ সালের জুনের পর থেকে WFME স্বীকৃতি না থাকলে, বাংলাদেশের এমবিবিএস ডিগ্রি অনেক দেশে গ্রহণযোগ্যতা হারাবে, ফলে বিদেশে চাকরি ও প্রশিক্ষণের সুযোগ সীমিত হবেতথ্যসূত্রঃ আইটিভিবিডি । তথ্যসূত্র ২ঃ এখন.টিভি

    বাংলাদেশ কেন WFME স্বীকৃতি পায়নি:

    বাংলাদেশ এখনও WFME-এর স্বীকৃতি অর্জন করতে পারেনি। স্বীকৃতি পেতে ১১টি নীতিমালা পূরণ করতে হবে, যার মধ্যে মেডিকেল অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল গঠন অন্যতম। দ্রুত স্বীকৃতি পেতে কি কি বাধা রয়েছে তা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। 

    তথ্যসূত্র এবং এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানতে, প্রফেসর ড. দীন মোহাম্মদ নুরুল হকের আলোচনা দেখতে পারেন। তথ্যসূত্রঃ ড. দীন মোহাম্ম নুরুল হকের আলোচনা

    উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু

    "আগে এমন মৃত্যু দেখিনি, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক: ডিজি হেলথ"

    তথ্যসূত্রঃ দৈনিক ইত্তেফাক 

    এমবিবিএসদের ভুল চিকিৎসা ও রোগী মৃত্যুর সাম্প্রতিক ঘটনাবলী 

    ⚫ গাজীপুরে ভুল চিকিৎসায় নারীর মৃত্যু: গাজীপুর মহানগরীর জয়দেবপুর এলাকায় হোলি ল্যাব মেডিকেল সার্ভিসেস লি. নামক একটি হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় আছিয়া খাতুন নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পালিয়ে যায়। তথ্যসূত্র: বাংলাট্রিবিউন

    ⚫ চট্টগ্রামে ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু ও সমঝোতা: চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ এলাকার ল্যানসেট হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় মুরাদ এস্কান্দার নামে এক রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে অভিযুক্ত দুই চিকিৎসক রোগীর স্বজনদের ১২ লাখ টাকা দিয়ে সমঝোতা করেন। তথ্যসূত্রঃ ঢাকাপোষ্ট

    ⚫ ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজে ভুল চিকিৎসার অভিযোগে বিক্ষোভ: পুরান ঢাকার ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতালে অভিজিৎ হাওলাদার নামে এক শিক্ষার্থীর ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর অভিযোগে শিক্ষার্থীরা হাসপাতালের প্রধান ফটক আটকে বিক্ষোভ ও ভাঙচুর করেন। তথ্যসূত্রঃ প্রথম আলো 

    ⚫ কিশোরগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (১৫ জানুয়ারি, ২০২৫)

    কিশোরগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভুল চিকিৎসার অভিযোগে দুই রোগীর মৃত্যু ঘটে। হার্নিয়া ও পেটের ব্যথা নিয়ে ভর্তি হওয়া মনিরুজ্জামান মল্লিক (৩২) এবং জহিরুল (২২) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, চিকিৎসকরা সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় করতে ব্যর্থ হন এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান করেননি। এই ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তদন্ত শুরু করলেও দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে এখনও কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তথ্যসূত্রঃ দ্যা ডেইলি স্টার

    ⚫ সেন্ট্রাল হাসপাতাল, ঢাকা (২০২৩)

    ২০২৩ সালে সেন্ট্রাল হাসপাতালে প্রসূতি মাহবুবা রহমান আঁখি ও তার নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় চিকিৎসায় অবহেলা ও ভুল চিকিৎসার অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ রয়েছে যে, প্রসূতি মায়ের জটিলতা সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হয়নি এবং সময়মতো প্রয়োজনীয় হস্তক্ষেপ করা হয়নি। এই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ডা. সংযুক্তা সাহার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। তথ্যসূত্রঃ দৈনিক ইত্তেফাক 

    ⚫ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (২০২৪)

    ২০২৪ সালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একটি শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় অভিযোগ ওঠে যে, চিকিৎসকরা ভুল ওষুধ প্রেসক্রাইব করেছিলেন। শিশুটির পরিবার অভিযোগ করে যে, চিকিৎসকরা প্রাথমিক লক্ষণগুলিকে গুরুত্ব সহকারে নেননি এবং সঠিক চিকিৎসা প্রদানে ব্যর্থ হন। তথ্যসূত্রঃ রাইসিং বিডি

    চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাচ্ছে বছরে ৪ বিলিয়ন ডলার

    তথ্যসূত্রঃ কালের কন্ঠ 

    চিকিৎসা নিতে বিদেশ যাচ্ছে বছরে ৮ লাখের বেশি মানুষ

    বাংলাদেশের অনেক নাগরিক উন্নত চিকিৎসার সন্ধানে প্রতিবছর বিদেশে যান। ২০২৩ সালে প্রায় ৪,৪৯,৫৭০ জন বাংলাদেশি চিকিৎসার জন্য বিদেশে গেছেন, যা আগের বছরের তুলনায় ৪৮% বেশি। এর ফলে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর প্রায় ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা) বিদেশে ব্যয় হয়। তথ্যসূত্রঃ জাগো নিউজ ২৪

    বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাওয়া বাংলাদেশিদের মধ্যে ৫১.৫% ভারতকে পছন্দ করেন। এরপর সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডে ২০% করে এবং যুক্তরাজ্যে ৩% রোগী যান। তথ্যসূত্রঃ সময়ের আলো 

    বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাওয়ার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে:

    • দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি অনাস্থা
    • উন্নতমানের চিকিৎসা সুবিধার অভাব
    • ভুল চিকিৎসার আশঙ্কা

    বাংলাদেশে বিএডিসি রেজিস্ট্রেশন নেওয়ার জন্য সিএমই পরীক্ষা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা নেই। এই ব্যবস্থার কারণে বাংলাদেশে চিকিৎসকদের পেশাগত মানোন্নয়ন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

    পৃথিবীর উন্নত দেশে এবং বহির্বিশ্বের অধিকাংশ দেশে চিকিৎসকদের জন্য এই পরীক্ষা দেয়া বাধ্যতামূলক। সিএমই বা কন্টিনিউয়িং মেডিকেল এডুকেশন হলো চিকিৎসকদের জ্ঞান ও দক্ষতা আপডেট রাখার একটি প্রক্রিয়া। চিকিৎসা বিজ্ঞান প্রতিনিয়ত উন্নত হচ্ছে, নতুন নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি, ওষুধ এবং প্রযুক্তি আসছে। সিএমই পরীক্ষা বা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে চিকিৎসকরা তাদের জ্ঞানকে হালনাগাদ রাখেন এবং রোগীদের আরও ভালো সেবা প্রদান করতে সক্ষম হন। অনেক দেশে চিকিৎসকদের লাইসেন্স নবায়নের জন্য নিয়মিত সিএমই কোর্স বা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক।

    বাংলাদেশে বিএডিসি রেজিস্ট্রেশন নেওয়ার জন্য সিএমই পরীক্ষা দেওয়ার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। এর ফলে অনেক চিকিৎসক তাদের পেশাগত জ্ঞান আপডেট রাখার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন না। যদিও কিছু চিকিৎসক স্বেচ্ছায় সেমিনার, ওয়ার্কশপ বা প্রশিক্ষণে অংশ নেন, তবে এটি সার্বজনীন নয়। এই অবস্থার কারণে চিকিৎসা সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে।

    আরো দেখুনঃ ডিএম‌এফ চিকিৎসকদের প্রেসক্রাইব করার বৈধতা আছে কি? আইন কি বলে?

    ১৬ বছরে অন্তত ১০ বার মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস: সিআইডি


    সিআইডি'র তথ্য অনুযায়ী, ২০০১ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে অন্তত ১০ বার মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে। এতে জড়িত চক্রটি হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে অবৈধভাবে ভর্তি করিয়ে শত কোটি টাকা আয় করেছে। 
    ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে গুলশানের সাহাবউদ্দিন মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় অকৃতকার্য দুই শিক্ষার্থীকে ভর্তির সুযোগ দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। তাদের একজন মাত্র ১১.৭৫ এবং অন্যজন ১৮.২৫ নম্বর পেয়েও ভর্তির তালিকায় স্থান পান। তথ্যসূত্রঃ নিউজ বাংলা ২৪

    ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে সরকারি মেডিকেল কলেজের 'উপজাতি' কোটায় ভর্তি তালিকায় অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। উপজাতি না হয়েও সাতজন বাঙালি শিক্ষার্থী এই কোটায় ভর্তির জন্য নির্বাচিত হন। তথ্যসূত্রঃ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস 

    এমবিবিএস শিক্ষার মানের অবনতি: মূল কারণসমূহ

    বাংলাদেশে এমবিবিএস শিক্ষার মানের অবনতির পেছনে বেশ কিছু গভীর সমস্যা রয়েছে। এই সমস্যাগুলো চিকিৎসকদের পেশাগত দক্ষতাকে সরাসরি প্রভাবিত করছে এবং স্বাস্থ্যসেবার মানকে নিম্নমুখী করছে।

    ১. শিক্ষার মান ও পাঠ্যক্রমের অপ্রচলিত পদ্ধতি

    বাংলাদেশের অনেক মেডিকেল কলেজে এখনও পুরনো পাঠ্যক্রম অনুসরণ করা হয়, যা আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারে না। শিক্ষার্থীরা তাত্ত্বিক জ্ঞানের উপর বেশি নির্ভরশীল, কিন্তু বাস্তবমুখী প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে। তথ্যসূত্রঃ দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড

    ২. প্র্যাকটিক্যাল ট্রেনিং এর অভাব

    মেডিকেল শিক্ষার্থীদের জন্য প্র্যাকটিক্যাল ট্রেনিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বাংলাদেশের অনেক মেডিকেল কলেজে পর্যাপ্ত প্র্যাকটিক্যাল সুযোগ-সুবিধা নেই। হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বেশি হলেও শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে শেখার সুযোগ সীমিত। তথ্যসূত্রঃ বনিক বার্তা 

    ৩. অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা

    বাংলাদেশের অনেক মেডিকেল কলেজে পর্যাপ্ত ক্লাসরুম, ল্যাবরেটরি, লাইব্রেরি এবং হাসপাতাল সুবিধার অভাব রয়েছে। এই সমস্যাগুলো শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মানকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে।

    ৪. গবেষণার অভাব

    বাংলাদেশের মেডিকেল কলেজগুলোর মধ্যে গবেষণার সংস্কৃতি খুবই দুর্বল। গবেষণার অভাবের কারণে শিক্ষার্থীরা আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিষ্কার এবং পদ্ধতিগুলো সম্পর্কে জানতে পারে না। তথ্যসূত্রঃ বনিক বার্তা 

    ৫. প্রশাসনিক দুর্বলতা ও দুর্নীতি

    বাংলাদেশের মেডিকেল শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রশাসনিক দুর্বলতা রয়েছে। অনেক মেডিকেল কলেজে দক্ষ প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং শিক্ষকের অভাব রয়েছে। এছাড়াও, দুর্নীতি এবং স্বজনপ্রীতি এই সমস্যাগুলোকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

    ৬. অপ্রাসঙ্গিক প্রতিযোগিতা 

    বাংলাদেশের এমবিবিএস গ্রাজুয়েটধারীরা নিজেদের মান উন্নয়নের চেষ্টা না করে, বরং প্রাইভেট প্র্যাকটিসকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। নিজেদের যৌক্তিক দাবি আদায়ের বিপরীতে ডিপ্লোমা চিকিৎসক পেশাজীবীদের নিয়েই ব্যাস্ত থাকেন, ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের রেফারেল সিস্টেম ভেঙ্গে পড়ার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছে‌। উন্নত রেফারেল সিস্টেম বজায় রাখতে রেজিস্টার্ড মিড লেভেল মেডিকেল প্র্যাকটিশনারদের স্বাস্থ্য খাতে স্বীকৃতি ও নিয়োগ প্রদান করা বাঞ্ছনীয়।

    ৭. মানহীন প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ

    মেডিকেল শিক্ষার পর্যাপ্ত পরিবেশ এবং মান নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই অনুমোদন দেয়া হচ্ছে শতশত প্রাইভেট মেডিকেল কলেজের। যেখান থেকে পড়াশোনা করে বের হচ্ছে অদক্ষতা সম্পন্ন চিকিৎসক। হাজার হাজার ডাক্তার থাকছে বেকার।

    ৮. মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় দুর্নীতি 

    শত শত ছেলে মেয়ে যথযথ যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও দুর্নীতি করে খুব সহজেই মেডিকেলে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে। ফলশ্রুতিতে মেধাবী হ‌ওয়া স্বত্ত্বেও অনেক শিক্ষার্থী সুযোগ হারাচ্ছে।

    আরো দেখুনঃ এমবিবিএস থাকতে ডিএম‌এফ চিকিৎসকের কি প্রয়োজন?

     সমাধানের উপায়

    বাংলাদেশের এমবিবিএস শিক্ষার মান উন্নয়ন এবং স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নের জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা যেতে পারে:

    ১. শিক্ষার মানোন্নয়ন

    - মেডিকেল কলেজগুলোর পাঠ্যক্রম আধুনিকীকরণ করতে হবে এবং বাস্তবমুখী প্রশিক্ষণের উপর জোর দিতে হবে।

    - আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা উপকরণ এবং প্রযুক্তি ব্যবহারের ব্যবস্থা করতে হবে।

    ২. প্রশিক্ষণ ও মূল্যায়ন

    - চিকিৎসকদের জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণ এবং দক্ষতা মূল্যায়নের ব্যবস্থা করতে হবে।

    - ইন্টার্নশিপ এবং প্র্যাকটিক্যাল ট্রেনিং এর মান উন্নয়ন করতে হবে।

     ৩. জবাবদিহিতা ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা

    - ভুল চিকিৎসা বা অবহেলার ঘটনায় দ্রুত ও কার্যকর তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।

    - স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে স্বাধীন নিয়ন্ত্রক সংস্থা গঠন করা যেতে পারে।

    ৪. গবেষণার সংস্কৃতি গড়ে তোলা

    - মেডিকেল কলেজগুলোর মধ্যে গবেষণার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে এবং গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত ফান্ডিং ও সুযোগ-সুবিধা প্রদান করতে হবে।

    ৫. জনসচেতনতা বৃদ্ধি

    - রোগীদের তাদের অধিকার এবং চিকিৎসা সেবার মান সম্পর্কে সচেতন করতে হবে, যাতে তারা ভুল চিকিৎসা বা অবহেলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে পারে।

    ৬. উন্নত রেফারেল সিস্টেম গড়ে তোলা

    পল্লী চিকিৎসক, অস্বীকৃত ডিপ্লোমাধারী কোয়াকদের আইনী সীমাবদ্ধতায় নিয়ে এসে বিএমমডিসি স্বীকৃত মিড লেবেল মেডিকেল প্র্যাকটিশনারদের (ডিএম‌এফ) নিয়োগ দিয়ে উন্নত কার্যকর রেফারেল সিস্টেম গড়ে তুলে সাধারণ রোগের চিকিৎসা গ্রাম অঞ্চলেই নিশ্চিত করা।

    ৭. চিকিৎসকদের বেতন কাঠামো বৃদ্ধি করা

    চিকিৎসকদের ইন্টার্নশিপ ভাতা বৃদ্ধি এবং উন্নত দেশের মতো বেতন কাঠামো নিশ্চিত করতে হবে।

    আরো দেখুনঃ পৃথিবীব্যাপী এমবিবিএস ছাড়াও যে মেডিকেল পেশাজীবীরা প্রেসক্রিপশন করার ক্ষমতা রাখেন

    বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতে এমবিবিএস চিকিৎসকদের অদক্ষতা, অপচিকিৎসা এবং ভুল চিকিৎসার ঘটনা ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য মেডিকেল শিক্ষার মানোন্নয়ন, প্রশিক্ষণ ও মূল্যায়নের ব্যবস্থা, জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ এবং গবেষণার সংস্কৃতি গড়ে তোলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকার, মেডিকেল কলেজ প্রশাসন, চিকিৎসক এবং জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়ন এবং জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব।