সিএইচসিপি কর্তৃক চিকিৎসা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ ও উত্তরণের উপায় কি

    সিএইচসিপি কর্তৃক চিকিৎসা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ ও উত্তরণের উপায় কি

    বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে সম্প্রতি একটি বিতর্কিত পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, যেখানে মাত্র তিন মাসের ট্রেনিং দিয়ে জেনারেল শিক্ষিত (এইচএসসি পাশ) সিএইচসিপি (Community Healthcare Provider) লোকজন দিয়ে কমিউনিটি ক্লিনিককে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে। তাদেরকে ৪০+ ড্রাগ লেখার অনুমতি দেয়া হয়েছে। অথচ বিএমডিসি (বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল) আইন অনুযায়ী, শুধুমাত্র বিএমডিসি নিবন্ধিত এমবিবিএস, বিডিএস, এবং ডিএমএফ ব্যক্তিরাই এ্যালোপ্যাথিক ঔষধ প্রেসক্রিপশন করতে পারেন। এই নিয়োগ এবং অনুমতি দেয়ার পদ্ধতি কতটুকু যৌক্তিক? এই প্রশ্নের উত্তরে আমরা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বিশ্লেষণ করব এবং সমাধান এর উপায় খুঁজবো

    বাংলাদেশের আইন কি বলে?

    বিএমডিসি আইন অনুযায়ী, শুধুমাত্র নিবন্ধিত মেডিকেল প্র্যাকটিশনাররাই (এমবিবিএস, বিডিএস, ডিএমএফ) চিকিৎসা সেবা এবং ঔষধ প্রেসক্রিপশন করতে পারেন। এই আইনের মূল উদ্দেশ্য হল রোগীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং চিকিৎসা সেবার মান বজায় রাখা। মেডিকেল শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ ছাড়া কাউকে ঔষধ প্রেসক্রিপশনের অনুমতি দিলে তা রোগীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। তাই সিএইচসিপি কর্তৃক চিকিৎসা প্রদান বিএমডিসি আইন বহির্ভূত।

    তিন মাসের ট্রেনিং এবং এর সীমাবদ্ধতা

    মাত্র তিন মাসের ট্রেনিং দিয়ে একজন এইচএসসি পাশ ব্যক্তিকে চিকিৎসা সেবা প্রদানের দায়িত্ব দেয়া হলে তা যথেষ্ট নয়। মেডিকেল শিক্ষা একটি দীর্ঘমেয়াদী এবং জটিল প্রক্রিয়া, যা শারীরবৃত্তীয়, রোগবিদ্যা, ফার্মাকোলজি, এবং ক্লিনিকাল প্র্যাকটিসের উপর গভীর জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। তিন মাসের ট্রেনিং এই জটিলতা এবং গভীরতা অর্জনের জন্য অপর্যাপ্ত।

    ডিএম‌এফ চিকিৎসকদের প্রেসক্রাইব করার বৈধতা আছে কি? আইন কি বলে?

    সিএইচসিপি দের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবার সম্ভাব্য ক্ষতি

    1. রোগীদের সুরক্ষা

    অপর্যাপ্ত জ্ঞান এবং প্রশিক্ষণ নিয়ে চিকিৎসা সেবা প্রদান করলে রোগীদের সুরক্ষা ঝুঁকিতে পড়ে। ভুল ডায়াগনোসিস এবং ভুল ঔষধ প্রেসক্রিপশন রোগীর জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।

    2. এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স

    সিএইচসিপি গণ তাদের ডিউটির বাইরে গিয়ে নগন্য মেডিকেল জ্ঞান নিয়ে চেম্বার করছে, যত্রতত্র এন্টিবায়োটিক লিখে রেজিস্ট্যান্স তৈরি করছে। এটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা এবং এটি মোকাবেলা করার জন্য কঠোর নিয়ম প্রয়োজন।

    3. চিকিৎসা সেবার মান

    অপর্যাপ্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের দ্বারা চিকিৎসা সেবা প্রদান করলে চিকিৎসা সেবার মান হ্রাস পায়, যা দেশের স্বাস্থ্য খাতের জন্য ক্ষতিকর।

    ব্রিটিশ-পাকিস্তান আমলের এল.এম.এফ ডাক্তারের বর্তমান রূপ ডি.এম.এফ ডাক্তার

    সিএইচসিপি দের নূন্যতম জ্ঞান মেডিকেল সেক্টরের জন্য ক্ষতিকর কেন?

    1. অপর্যাপ্ত জ্ঞান

    সিএইচসিপি দের মেডিকেল জ্ঞান অপর্যাপ্ত, যা রোগীদের সঠিক চিকিৎসা প্রদানে বাধা সৃষ্টি করে।

    2. ভুল ডায়াগনোসিস

    অপর্যাপ্ত জ্ঞান এবং প্রশিক্ষণের কারণে ভুল ডায়াগনোসিসের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়, যা রোগীর জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।

    3. ঔষধের অপব্যবহার

     সিএইচসিপি দের ঔষধের অপব্যবহারের সম্ভাবনা বেশি, যা রোগীর স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

    পৃথিবীব্যাপী এমবিবিএস ছাড়াও যে মেডিকেল পেশাজীবীরা প্রেসক্রিপশন করার ক্ষমতা রাখেন

    সমাধান এবং সুপারিশ

    1. সিএইচসিপি দের শুধুমাত্র ঔষধ বিপনন কাজে ব্যবহার করা। সিএইচসিপি দের শুধুমাত্র ঔষধ বিপনন কাজে ব্যবহার করা উচিত, যাতে তারা চিকিৎসা সেবা প্রদানের দায়িত্ব না পায়।

    2. ডিএমএফ'দের নিয়োগ দেয়া। ৪.৬ বছর মেডিকেল ডিপ্লোমাধারী ডিএমএফ'দের উক্তস্থানে নিয়োগ দেয়া উচিত, যারা মেডিকেল জ্ঞানের উপর গভীর জ্ঞান অর্জন করেছেন এবং রোগীদের সঠিক চিকিৎসা সেবা প্রদান করতে সক্ষম।

    3. প্রশিক্ষণের সময় বৃদ্ধি করা। সিএইচসিপি দের জন্য প্রশিক্ষণের সময় বৃদ্ধি করা উচিত, যাতে তারা মেডিকেল জ্ঞানের উপর আরো গভীরতা অর্জন করতে পারে।

    4. কঠোর নিয়ম এবং মনিটরিং এ রাখা। বিএমডিসি আইন অনুযায়ী কঠোর নিয়ম প্রয়োগ এবং মনিটরিং ব্যবস্থা গড়ে তোলা উচিত, যাতে অপর্যাপ্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা চিকিৎসা সেবা প্রদান করতে না পারে।

    5. সচেতনতা বৃদ্ধি করা। রোগীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা উচিত, যাতে তারা শুধুমাত্র নিবন্ধিত মেডিকেল প্র্যাকটিশনারদের কাছ থেকে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করে।

    মাত্র তিন মাসের ট্রেনিং দিয়ে জেনারেল শিক্ষিত (এইচএসসি পাশ) সিএইচসিপি লোকজন দিয়ে কমিউনিটি ক্লিনিককে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা বিএমডিসি আইন এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এটি রোগীদের সুরক্ষা এবং চিকিৎসা সেবার মানের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এই সমস্যা সমাধানের জন্য সিএইচসিপি দের শুধুমাত্র ঔষধ বিপনন কাজে ব্যবহার করে, ৪.৬ বছর মেডিকেল ডিপ্লোমাধারী ডিএমএফ'দের উক্তস্থানে নিয়োগ দেয়া, প্রশিক্ষণের সময় বৃদ্ধি, কঠোর নিয়ম প্রয়োগ, এবং সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।