ডিএমএফ, ম্যাটস প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা কি যৌক্তিক সমাধান
যদি ম্যাটস বন্ধ করে দেয়া হয়, ডিএমএফ'দের যৌক্তিক দাবি মেনে না নেয়া হয়, তবে-
🟥 ৮ লাখের বেশি মানুষ প্রতিবছর বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাচ্ছে।
সে সংখ্যা কি কমে আসবে?
🟥 চিকিৎসার জন্য ৬০ হাজার কোটি টাকা প্রতি বছর বিদেশে ব্যায় হয়।
সে টাকার পরিমাণ কি কমে আসবে?
🟥 ৯৬% চিকিৎসক গ্রামে থাকতে সমস্যা দেখেন, ৪৬% চিকিৎসক হাসপাতালে অনুপস্থিত থাকেন।
এ সমস্যা কি সমাধান হবে?
🟥 দেশের ৫৮% মানুষ চিকিৎসা নিতে ধারদেনা করেন, জমি বিক্রি করে নিঃস হয়ে যান।
জনসাধারণের চিকিৎসা খরচ কি কমে আসবে?
🟥 গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা কি নিশ্চিত হবে?
🟥 ডিএমএফ চিকিৎসক কর্তৃক প্রদত্ত চিকিৎসা সেবা কি গ্রাজুয়েট চিকিৎসক প্রদান করবে?
স্বাস্থ্যসেবার মূল স্তম্ভ হলো চিকিৎসা পেশার প্রতিটি সদস্যের সমন্বিত প্রচেষ্টা। চিকিৎসা ব্যবস্থায় ডিএমএফ ও এমবিবিএস চিকিৎসকগণ ভিন্ন পর্যায়ের দক্ষতা ও প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ করেন। একজন ডিএমএফ পেশাজীবী চিকিৎসা সেবার ফ্রন্টলাইন-এ কাজ করেন, নির্ধারিত প্রটোকল অনুযায়ী চিকিৎসা প্রদান করেন এবং রোগ নির্ণয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তারা চিকিৎসা প্রদান পূর্বক ও রোগ নির্ণয়ের মাধ্যমে উন্নত চিকিৎসার জন্য রোগীদের এমবিবিএস ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের কাছে রেফার করেন।
অন্যদিকে, একজন এমবিবিএস চিকিৎসক রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা ও সার্জারির মতো জটিল চিকিৎসা সেবা পরিচালনা করেন। স্বাস্থ্য সেক্টরের নেতা ও গুরুজন হিসেবে প্রধান ভুমিকা পালন করেন।
ডিএমএফ ডিগ্রিধারী তাদের পরিধি অনুযায়ী সেবা দিয়ে থাকেন, এমবিবিএস'গণ তাদের পরিধি অনুযায়ী সেবা দিয়ে থাকেন। প্রত্যেকের আলাদা জব ডেসক্রিপশন আছে, পদ আছে, পদবী আছে। প্রত্যেকে স্বপদে স্বাস্থ্যখাতে ভূমিকা পালন করেন। একে অন্যের বিকল্প নয় বরং সহযোগী, সহকর্মী।
স্বাস্থ্যখাতের প্রয়োজনে গ্রামীন জনগোষ্ঠীর চিকিৎসা চাহিদা পূরণ করতে গ্রাজুয়েট চিকিৎসকগণ, এ দেশের সরকার ডিএমএফ'দের তৈরি করেছেন। চিকিৎসা ক্যারিকুলাম তৈরি করেছেন, শিক্ষা দিয়েছেন, পোষ্ট-পদবী, কর্ম পরিধি দিয়েছেন।
আপনারাই তৈরি করে এখন নিয়োগ বন্ধ রেখেছেন, ক্যারিকুলাম যুগোপযোগী করতে বাধা দিচ্ছেন, প্রাপ্য সম্মানটুকু দিচ্ছেন না, নায্য দাবি মেনে নিচ্ছেন না।
এ যেন নদীকে সাগরে মিশে যেতে বাঁধা দিচ্ছেন। অথচ সাগরের জল নদী-ই বয়ে নিয়ে জনপদে ছড়িয়ে দেয়। বৃষ্টির জল বয়ে নিয়ে নদী শেষমেষ সাগরের বুকে মিশে যায়।
আপনি সাগর হয়ে নদীর অস্তিত্ব অস্বীকার করছেন। নদীকে থামিয়ে দিতে চাচ্ছেন। নদী না থাকলে সাগরের না যতটা ক্ষতি হবে, তার থেকেও শতগুণ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে সাধারণ জনপদ। কেননা যে জলধারা খুব সহজে জনপদে বয়ে আনে নদী, সেই জলাধারা পেতে জনপদের যেতে হবে সমুদ্রের নিকটে।
তেমনি ডিএমএফ চিকিৎসকদের থামিয়ে দিলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে গ্রামীণ সাধারণ জনগোষ্ঠী।
স্বাস্থ্যখাতে কি ডিএমএফ ডিগ্রিধারীদের প্রয়োজন নেই?
ভুলে যাবেন না-
সমন্বিত রেফারেল সিস্টেম মানেই উন্নত স্বাস্থ্যসেবা!
🟢 ডিএমএফরা সাধারণ সংক্রমণ, আঘাত বা দীর্ঘস্থায়ী রোগ ব্যবস্থাপনার প্রথম ধাপে থাকেন। প্রান্তিক পর্যায়ের জনগোষ্ঠীর চিকিৎসা সেবা নিয়ে প্রথম সারিতে ভূমিকা রাখেন। এর ফলে ডিএমএফরা প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ শনাক্ত করে সঠিক সময়েই রোগীকে রেফার করতে পারেন, যা চিকিৎসার সাফল্যের হার বাড়ায়।
🟢 ডিএমএফরা সাধারণ ও কম জটিল রোগগুলো স্থানীয়ভাবে সমাধান করতে পারেন, ফলে হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের ওপর সাধারণ রোগীর চাপ অনেক কমে যাবে। এতে তারা গুরুতর রোগীদের ওপর আরও বেশি মনোযোগ দিতে পারবেন।
🟢 প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় না হলে রোগীরা সরাসরি বিশেষজ্ঞদের কাছে যান, যা সময় ও অর্থ দুটোই নষ্ট করতে পারে। ডিএমএফদের মাধ্যমে রেফারেল ব্যবস্থা কার্যকর হলে রোগীরা সঠিক সময়ে স্বল্প খরচে সঠিক চিকিৎসা পেতে পারেন।
🟢 যেহেতু ডিএমএফরা গ্রামীণ ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মাঝে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা নিয়ে কাজ করেন। তাই তারা সাধারণ জনগোষ্ঠীর সচেতনতা নিয়ে কাজ করতে পারেন যা রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করবে।
🟢 রোগীদের সময়মতো ও সঠিক স্থানে রেফার করতে পারলে চিকিৎসার সফলতার হার বাড়ে এবং মৃত্যুহার কমে।
তাই মেডিকেল টিমওয়ার্কের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে ডিএমএফ'দের বিকল্প নেই।
Post a Comment