এস.এস.সি ২.৫ থাকলেই কি ম্যাটসে ভর্তি হ‌ওয়া যায়? নাকি অপপ্রচার?

    এস.এস.সি ২.৫ থাকলেই কি ম্যাটসে ভর্তি হ‌ওয়া যায়? নাকি অপপ্রচার?

    বিজ্ঞান বিভাগ হতে এস‌.এস.সি ২.৫ থাকলেই কি ম্যাটসে ভর্তি হ‌ওয়া যায়?

    ♦️ উত্তর হলো না। 

    কারণ ম্যাটসে সরাসরি ভর্তি হ‌ওয়া যায় না। মেডিকেল,‌ ভার্সিটির মতোই প্রতিযোগিতা মূলক ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে চান্স পেলে তবেই ভর্তি হ‌ওয়া যায়। 

    আর এই ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে সর্বনিম্ন জিপিএ ২.৫ পাওয়া স্টুডেন্ট থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ জিপিএ ৫.০০ পাওয়া পর্যন্ত সকল স্টুডেন্টরা।‌ প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষা হ‌ওয়ায় শুধুমাত্র প্রথম সারির স্টুডেন্টরাই চান্স পায়, বাকিরা অটোমেটিক বাদ পড়ে যায়। 

    এজন্য দেখা যায় সরকারি ম্যাটসের ৯০% শিক্ষার্থী এস‌এসসিতে এ প্লাস পাওয়া স্টুডেন্টরাই ভর্তি হয়। 

    ◾ম্যাটসের পড়াশোনা সম্পূর্ণ ইংলিশ মিডিয়াম।

    ◾এমবিবিএস'দের যেসকল সাবজেক্টস পড়ানো সেই সকল সাবজেক্টস এক‌ই ব‌ই থেকে তুলনামূলক ছোট‌ সিলেবাসে পড়ানো হয়। তারমানে সাবজেক্টস গুলো কতটা কঠিন তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই।

    ◾ক্লাস করান এমবিবিএস ডিগ্রিধারী বিসিএস চিকিৎসকগণ। 

    ◾প্রতিটি সাবজেক্টস লিখিত সর্বনিম্ন পাশ মার্ক ৬০ এবং ভাইভা সর্বনিম্ন পাশ মার্ক ৬০, একত্রে সর্বনিম্ন পাশ মার্ক ১২০ পেয়ে পাশ করতে হয়।

    ◾ডিএম‌এফ সনদ প্রদান করেন বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদ।

    ◾ বিএমমডিসি লাইসেন্স প্রদান করেন বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল।

    সর্বনিম্ন মেধাবী শিক্ষার্থীরা এই কোর্সে চান্স পায় না। কারণ ভর্তি পরীক্ষায় বাদ পড়ে যায়। তাদের মান সুনিশ্চিত হয় কেননা কোর্সের কঠিন‌ পরীক্ষা পদ্ধতির ভেতর দিয়ে পাশ করে বের হতে হয়। একাডেমিক পড়াশোনা চলাকালীন সময়ে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় হাসপাতালে ডিউটি করতে হয়। একাডেমিক পরীক্ষা সমুহ এমবিবিএস চিকিৎসক গণ যারা আছেন তারাই পরীক্ষার ইভালুয়েশন করেন এবং ভাইভা পরীক্ষা নেন। এভাবে ৪ বছরের একাডেমিক পরীক্ষায় পাশ করে বের হ‌ওয়ার পর ম্যাটস শিক্ষার্থীদের জেলা সদর হাসপাতালে গ্রাজুয়েট চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে ৬ মাস ইন্টার্নশিপ করতে হয়। এসময় হাসপাতালে কর্মরত এমবিবিএস চিকিৎসকগণ রোগী দেখা, চিকিৎসা প্রদান ইত্যাদি বিষয় শিখিয়ে থাকেন।

    HSC পাশ কি ডিএমএফ, ম্যাটসের থেকেও বেশি যোগ্যতাধারী?

    এর পরবর্তীতে ম্যাটস শিক্ষার্থীরা বিএমডিসি হতে ডি ক্যাটাগরি রেজিস্ট্রেশন গ্রহণ করে নির্ধারিত নীতিমালা অনুযায়ী বৈধভাবে চিকিৎসা করার জন্য লাইসেন্সপ্রাপ্ত হন।

    এবার নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন- ম্যাটস শিক্ষার্থীদের ক্যারিকুলাম, ভর্তি যোগ্যতা, পরীক্ষা পদ্ধতি, ইন্টার্নশিপ, ইভ্যালুয়েশন, ট্রেনিং, বিএমডিসির লাইসেন্স এসব কিছুই নিয়ন্ত্রণ করেন এমবিবিএস, বিসিএস ডিগ্রিধারীগণ। এসকল প্রশাসনিক খাতে ডিএমএফ'দের কোন নিয়ন্ত্রন নেই।

    🟢 এমবিবিএস চিকিৎসকরাই ডিএম‌এফ'দের চিকিৎসা দেওয়ার যোগ্য হিসেবে গড়ে তোলেন।

    🟢 ম্যাটস শিক্ষার্থীদের মান যেন সুনিশ্চিত হয় এজন্য ক্যারিকুলাম, একাডেমিক পড়াশোনা, পরীক্ষা ইভালুয়েশন এমবিবিএস চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধায়নেই হয়। 

    🟢 হাসপাতালে দায়িত্বরত এমবিবিএস এবং পোষ্ট গ্রাজুয়েশন করা চিকিৎসকগণ‌ই ডিএমএফ'দের ইন্টার্নশিপ করান।

    🟢 বিএমমডিসি রেজিঃ পাওয়ার যোগ্য হিসেবে ওনারাই গড়ে তোলেন। নির্ধারিত নীতিমালা অনুযায়ী চিকিৎসা দেবার জন্য লাইসেন্স প্রদান করেন।

    তারমানে ম্যাটস শিক্ষার্থীদের মানসম্পন্ন করে গড়ে তোলেন এমবিবিএস চিকিৎসকগণ। 

    অদক্ষ প্রতারক এমবিবিএস ডাঃ যেভাবে চিনবেন

    তাহলে ভর্তি যোগ্যতা কেন এস.এস.সি ২.৫ ?

    এই প্রশ্নের উত্তর হলো হলো ব্যবসা। বেসরকারি ম্যাটস প্রতিষ্ঠানের মালিক হলো এমবিবিএস চিকিৎসকগণ। ভর্তি যোগ্যতা কম থাকলে রমরমা ব্যবসা করতে সুবিধা হয়। নূন্যতম পাশ‌ মার্ক পাওয়া স্টুডেন্টদের ভর্তি করিয়ে পকেট ভারী করা যায়। তাই কতিপয় ব্যবসায়ীরা ইচ্ছে করেই ভর্তি যোগ্যতা কমিয়ে রেখেছেন।

    ডিএম‌এফ, ম্যাটস প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা কি যৌক্তিক সমাধান‌

    এমবিবিএস ডিগ্রিধারীগণ নিজেরাই ম্যাটস তৈরি করে এখন কেন তারাই বিরোধীতা করছেন?

    এর জবাব হলো বেসরকারি মেডিকেল কলেজ গুলো। বেসরকারি ম্যাটসের মতোই মানহীন বেসরকারি মেডিকেল কলেজ থেকে বের হচ্ছে হাজারে হাজারে এমবিবিএস চিকিৎসক। যারা এমবিবিএস ডিগ্রিটা পেলেও পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ, সুযোগ, সুবিধা না পাওয়ায় নিজেদের দক্ষতার ব্যাপারে সন্দিহান। তারাই তাদের প্রাইভেট প্র্যাকটিসে রোগী না পাওয়া, বেকার বসে থাকা, চাকরি না হ‌ওয়া ইত্যাদি কারণ সহ কিছু কিছু কুচক্রী মহলের উস্কানিতে ক্ষেপে উঠেছে। 

    এমবিবিএস থাকতে ডিএম‌এফ চিকিৎসকের কি প্রয়োজন?

    এজন্য এমবিবিএসরা নিজেদের গড়ে তোলা ম্যাটস শিক্ষার্থীদের তারা নিজেদের‌ই প্রতিপক্ষ ভাবছে। নিয়োগ আটকে রেখেছে, ক্যারিয়াকুলাম আপডেট করতে বাধা দিচ্ছে, প্র্যাকটিস করতে দিতে চাচ্ছে না।

    অথচ তাদের উচিত ছিল নিজেদের মান উন্নয়ন করা, দক্ষ চিকিৎসক হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলা। বিদেশগামী রোগীদের দেশের চিকিৎসার প্রতি আস্থাশীল করা। দেশের মাটিতে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। ম্যাটস পড়ুয়া ডিএম‌এফ'দের কাজে লাগিয়ে উন্নত রেফারেল সিস্টেম গড়ে তোলা। ম্যাটস শিক্ষার্থীদের মান উন্নয়ন করে, নির্ধারিত প্রটোকলের মাধ্যমে তাদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা খাতে কাজে লাগিয়ে রেফারেল সিস্টেমে সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা।